যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের ইঙ্গিত পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। একই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকির জেরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের পাশে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির তীব্র সমালোচনা করেছে চীন।
🇨🇳 চীনের প্রতিক্রিয়া: “শুল্ক নয়, সহযোগিতাই সমাধান”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিকে “জবরদস্তির হাতিয়ার” আখ্যা দিয়ে জানায়, এটি কেবল অর্থনৈতিক চাপ নয়, বরং একটি স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের স্পষ্ট নিদর্শন। বেইজিংয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বকে একতরফাভাবে নিয়ন্ত্রণ করার এ প্রবণতা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সমমর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী এবং “বিশ্বের বাকি অংশের সঙ্গে উন্নয়ন ভাগাভাগি করতে উন্মুক্ত”।
🇺🇸 হোয়াইট হাউস থেকে হুমকি, সম্মতি ও সমর্থন
ব্রাজিল সরকারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তিনটি প্রধান কারণ দেখিয়ে শুল্ক আরোপের কথা জানান:
-
সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তদন্ত,
-
ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর সেন্সরশিপের অভিযোগ,
-
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও “অন্যায্য” বাণিজ্যিক সম্পর্ক।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে লুলার সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার আগ্রহ জানালেও, ট্রাম্প আবারও প্রকাশ্যে বলসোনারোর পক্ষাবলম্বন করেছেন। তিনি বলসোনারোকে “অত্যন্ত সৎ” ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “তার সঙ্গে যা হচ্ছে, তা গভীর অন্যায়।”
🌐 বাণিজ্য যুদ্ধের পুরনো ক্ষত এখন নতুন করে জেগে উঠছে?
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক পূর্ব থেকেই টানাপোড়েনপূর্ণ। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক হার একপর্যায়ে ১০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর গড়ে ৩০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে, আর চীন প্রতিক্রিয়ায় ১০ শতাংশ হার ধার্য রেখেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্রাজিলকে ঘিরে এই নতুন উত্তেজনা সেই পুরনো বাণিজ্য যুদ্ধের ভূতকেই আবার জাগিয়ে তুলেছে।
🤝 দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগে আশার আলো
এদিকে, কৌশলগত অবস্থান বজায় রেখে চীন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সংলাপের পথ খোলা রেখেছে। সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় শুল্ক ও বাণিজ্য ইস্যুই ছিল মূল এজেন্ডা। উভয় পক্ষই আলোচনাকে “গঠনমূলক ও ইতিবাচক” বলে বর্ণনা করেছে।
এটি আগামীতে ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সরাসরি বৈঠকের সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলেছে।
🔖 বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিকোণ:
বিশ্ব রাজনীতিতে বাণিজ্য কখনোই কেবল অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নয়—তা ক্ষমতা, প্রভাব এবং কূটনৈতিক বার্তারও বাহক। ব্রাজিলকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই অবস্থান কোনো নিছক শুল্কবিষয়ক বিরোধ নয়, বরং ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতীকী সংঘর্ষ।
📌 #ট্রাম্প #লুলা #চীন #ব্রাজিল #যুক্তরাষ্ট্র #শুল্কনীতি #বাণিজ্যযুদ্ধ #বলসোনারো #আন্তর্জাতিকরাজনীতি #BRICS #ট্রেড_টেনশন
0 মন্তব্যসমূহ