মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ৫০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির জবাবে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে যাচ্ছে ব্রাজিল সরকার। ভাইস প্রেসিডেন্টের দপ্তর নিশ্চিত করেছে, আসছে সোমবার (১৪ জুলাই) “অর্থনৈতিক পারস্পরিকতা আইন” অনুযায়ী একটি নিয়ন্ত্রক ডিক্রি প্রকাশ করা হবে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমতুল্য প্রতিক্রিয়া প্রদানের পথ উন্মুক্ত হবে।
এই ডিক্রিতে স্বাক্ষর করবেন প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি এরইমধ্যে শুল্ক বৃদ্ধিকে “অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন” আখ্যা দিয়ে, শক্ত প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন। “আপনারা যদি আমাদের পণ্যে শুল্ক বসান, আমরাও বসাবো। এটা হবে পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া,”—গত সপ্তাহে মন্ত্রীদের এক বৈঠকে সাফ জানিয়ে দেন লুলা।
কংগ্রেস অনুমোদিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা
যে আইনের আওতায় প্রতিশোধমূলক এই ডিক্রি জারি হচ্ছে, তা চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কংগ্রেসে বিপুল সমর্থন পেয়ে পাস হয়। এতে বলা হয়, যদি কোনো দেশ ব্রাজিলের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বা শুল্ক আরোপ করে, তবে সরকার সেই দেশটির বিরুদ্ধে সমতুল্য প্রতিক্রিয়া নিতে পারবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আইন ব্রাজিলকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরও আত্মবিশ্বাসী ও সংহত অবস্থানে দাঁড় করায়।
⚖️ জবাবদিহিমূলক কাঠামো: সংকট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন
শুধু ডিক্রি জারিতেই থেমে থাকছে না সরকার। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্ডো অ্যালকমিনের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের সংকট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা শুল্কবৃদ্ধির পরিণতির কৌশলগত মূল্যায়ন ও করণীয় নির্ধারণ করবে।
কমিটি কৃষি ও শিল্পসহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রধান খাতগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালাবে। গরুর মাংস, কমলার রস, কফি, প্রযুক্তিপণ্য এবং বিমানচালনা খাতের নেতৃবৃন্দ—যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্রাজিলিয়ান বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমব্রেয়ার— ইতোমধ্যে আমন্ত্রণ পেয়েছেন।
🌐 বিকল্প বাজারের সন্ধানে ব্রাজিল
কমিটির আরেকটি দায়িত্ব হবে, মার্কিন বাজারে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে নতুন বিকল্প রপ্তানি বাজার খুঁজে বের করা। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি না হলে এই পথেই হাঁটবে ব্রাজিল।
ট্রাম্পের শুল্কের পেছনে রাজনৈতিক বার্তা?
ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাজিলের ওপর এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন ১লা আগস্ট থেকে কার্যকর করার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্রাজিলের সঙ্গে বাণিজ্যে মার্কিন ঘাটতি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিচারপ্রক্রিয়া এই সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ। ট্রাম্প বলেছিলেন, “বলসোনারোর বিচার আন্তর্জাতিকভাবে লজ্জার।”
📊 লুলার পাল্টা জবাব: "আমরা নিয়ন্ত্রণ মানি না"
প্রেসিডেন্ট লুলা ট্রাম্পের অভিযোগকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, “বাণিজ্য ভারসাম্য কোনো কল্পনার বিষয় নয়, বরং সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত।” সরকারের তথ্যমতে, প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রই ব্রাজিল থেকে বেশি রপ্তানি করে, অর্থাৎ বাণিজ্য উদ্বৃত্ত যুক্তরাষ্ট্রেরই পক্ষে।
📌 #ব্রাজিল #যুক্তরাষ্ট্র #ট্রাম্প #লুলা #শুল্কনীতি #অর্থনৈতিকপ্রতিশোধ #বাণিজ্যউত্তেজনা #আন্তর্জাতিকবাণিজ্য #সংকটব্যবস্থাপনা #জেরাল্ডোঅ্যালকমিন
0 মন্তব্যসমূহ