সংবাদ প্রতিবেদন:
ব্রাসিলিয়া, ১১ জুলাই ২০২৫:
বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি বিকল্প বৈশ্বিক মুদ্রা গঠনের আহ্বান জানালেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এক সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, “আমাদের একটি নতুন মুদ্রা দরকার—যা বিশ্ব বাণিজ্যে সম্ভাবিত বিকল্প হয়ে উঠবে।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি লুলা আবারও তার বহুপরিচিত স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করলেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এখন সময় এসেছে ডলারের বিকল্প ভাবার।
লুলা আরও বলেন, “বিশ্বব্যাপী দক্ষিণের দেশগুলোকে একজোট হয়ে একটি বিকল্প অর্থনৈতিক কাঠামো নির্মাণ করতে হবে, যাতে আর্থিক নির্ভরতা ও বৈষম্য হ্রাস পায়।” তিনি একটি “সুষম ও ন্যায্য মুদ্রাব্যবস্থা” গঠনের আহ্বান জানান, যা আমদানি-রপ্তানিতে লেনদেন সহজ করবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বৈশ্বিক বাজারে বেশি সুযোগ করে দেবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, লুলার এই বক্তব্য শুধুই রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়, বরং বাস্তব সম্ভাবনার দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) জোট ইতিমধ্যে একটি যৌথ মুদ্রা চালুর ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে। এই উদ্যোগ সফল হলে এটি ডলারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে, বিশেষ করে সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার বাণিজ্যে।
তবে এ বিষয়ে চ্যালেঞ্জও কম নয়। এমন একটি মুদ্রা চালু করতে হলে প্রয়োজন হবে বিস্তৃত অর্থনৈতিক সমন্বয়, স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যদিও রাজনৈতিকভাবে এটি আকর্ষণীয়, তবে প্রযুক্তিগত ও আর্থিকভাবে এখনও অনেক পথ বাকি।
💬 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
লুলার এই ঘোষণার পর বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়েছে। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কেউ একে “প্রগতিশীল নেতৃত্বের সাহসী চিন্তা” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন এটি "বাস্তবায়নে দুরূহ"।
রাষ্ট্রপতি লুলা ২০২৩ সালে তৃতীয়বারের মতো ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আগের দুই মেয়াদে (২০০৩–২০১০) তিনি ব্রাজিলকে অর্থনৈতিকভাবে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। এবার তার লক্ষ্য শুধু দেশের ভেতরে নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ব্রাজিলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা।
রাষ্ট্রপতি লুলার এই মন্তব্য ভবিষ্যতের বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাব্য রূপরেখা আঁকছে। তিনি শুধু ব্রাজিল নয়, বরং পুরো বৈশ্বিক দক্ষিণের পক্ষে একটি বিকল্প ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছেন। এখন দেখার বিষয়, এই সাহসী
আহ্বান বাস্তব রূপ পায় কিনা।
0 মন্তব্যসমূহ