Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ব্রাজিলে মুসলিমদের ইতিহাস: দাসবাণিজ্য থেকে আধুনিক মসজিদ অবধি



ব্রাজিল বাংলা টিভি ডেস্ক:📍 সাও পাওলো, ১৭ জুলাই ২০২৫

ব্রাজিলে ইসলাম ধর্মের উপস্থিতি প্রায় পাঁচ শতাব্দী পুরনো। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আনা দাসদের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হলেও আজ তা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রায় সব বড় শহরে। মসজিদ নির্মাণ, ধর্মীয় সংগঠন এবং মুসলিম সমাজের সক্রিয়তায় ব্রাজিলে ইসলাম এখন দৃশ্যমান ও সাংগঠনিকভাবে প্রভাবশালী এক সম্প্রদায়ে রূপ নিয়েছে।

দাসবাণিজ্যের হাত ধরে ইসলামের প্রথম পদার্পণ

ব্রাজিলে মুসলিমদের আগমন শুরু হয় ১৫৫০ সালের পর থেকে, যখন আফ্রিকার মুসলিম-অধ্যুষিত অঞ্চল যেমন হাউসা, নাগো (ইয়োরুবা), ও মান্ডিঙ্গা থেকে বিপুল সংখ্যক দাস ব্রাজিলে আনা হয়। এসব আফ্রিকান মুসলমানরা শুধু শ্রমিকই ছিলেন না, ছিলেন সুসংগঠিত ধর্মপ্রাণ মানুষ। ১৮৩৫ সালের “মালে বিদ্রোহ” তারই প্রমাণ, যেখানে বাহিয়া রাজ্যের সালভাদোর শহরে মুসলিম দাসরা দুঃসাহসিক এক বিদ্রোহ সংঘটিত করেন।

মধ্যপ্রাচ্যীয় অভিবাসনে ইসলামের দ্বিতীয় উত্থান

উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে শুরু হয় আরব অভিবাসনের ঢল—বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন থেকে আসা মুসলমানদের আগমন ঘটে ব্যবসায় ও বসবাসের উদ্দেশ্যে। এদের মাধ্যমে গড়ে ওঠে নানা ইসলামিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, যা পরবর্তী সময়ে মসজিদ প্রতিষ্ঠার রূপ নেয়।

দেশের প্রথম মসজিদ এবং সংগঠনের যাত্রা

ব্রাজিলের প্রাচীনতম মসজিদ, ‘মেসকিতা ব্রাসিল’, সাও পাওলো শহরে নির্মিত হয়। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৪০-এর দশকে এবং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ২০ মে ১৯৬০ সালে। বর্তমানে এটি দেশের অন্যতম কেন্দ্রীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।

পরবর্তীতে, ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় Federação das Associações Muçulmanas do Brasil (FAMBRAS) নামক জাতীয় সমন্বয় সংগঠন, যা ব্রাজিলজুড়ে মসজিদ স্থাপন ও ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে নেতৃত্ব দেয়।

আজকের মুসলিম সমাজ: ছড়িয়ে ছিটিয়ে, তবু ঐক্যবদ্ধ

সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, ব্রাজিলে মুসলমানদের আনুষ্ঠানিক সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার হলেও বিভিন্ন সূত্রে অনানুষ্ঠানিক সংখ্যা ২ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত বলে ধারণা করা হয়। দেশের অন্তত ১৫০টির বেশি মসজিদ, নামাজঘর ও ইসলামিক সেন্টার এখন সক্রিয় রয়েছে।

সাও পাওলো, রিও দে জেনেইরো, কুরিতিবা, বেলো হরিজোন্তি, ফোজ দো ইগুাসু, ব্রাসিলিয়া, সালভাদোর, মানাউস, ও ফ্লোরিয়ানোপোলিস শহরগুলোতে বৃহৎ মুসলিম সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে ফোজ দো ইগুাসু শহরের ‘মসজিদ ওমর ইবনে আল-খাত্তাব’ পর্যটকদেরও একটি উল্লেখযোগ্য গন্তব্য।

ঐতিহ্য ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধন

ব্রাজিলের মুসলিম সমাজ আজ শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ইসলামিক স্কুল, হালাল সনদ প্রদান, এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপে মুসলিম সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

একসময় যেসব মুসলমান জোরপূর্বক আনা হয়েছিল দাস হিসেবে, আজ তাঁদের উত্তরসূরীরা ব্রাজিলের সমাজে আত্মমর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। এক বৈচিত্র্যময়, বহুত্ববাদী ব্রাজিলের অংশ হিসেবে ইসলাম এখন কেবল অতীত নয়, একটি সক্রিয় বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রতিনিধিও।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ