Header Ads Widget

Responsive Advertisement

ট্রাম্পের শুল্কের আগে বিমানে আইফোন: অ্যাপলের জরুরি চালান এবং এক নীতির বহুমাত্রিক অভিঘাত



ব্রাজিল বাংলা টিভি ডেস্ক:  বিশেষ প্রতিবেদন | প্রতিবেদক:নিলয় দেওয়ান জীবন 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ‘রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ ঘোষণা—যার আওতায় নির্দিষ্ট দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে—এরইমধ্যে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলায় ধাক্কা দিতে শুরু করেছে। এই ঘোষণার পর প্রথম কৌশলগত প্রতিক্রিয়া এসেছে অ্যাপল ইনকরপোরেটেড-এর পক্ষ থেকে। শুল্ক কার্যকরের আগে তড়িঘড়ি করে সংস্থাটি ভারত ও চীন থেকে আইফোনসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করেছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, মার্চের শেষ সপ্তাহে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ভারত থেকে পাঁচটি কার্গো বিমানে আইফোন পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু ভারতই নয়, চীনের কারখানাগুলো থেকেও দ্রুত পণ্য রপ্তানি করা হয়—সবই ৫ এপ্রিলের আগে মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই মার্কেটে পণ্য ঢোকাতে।

শুল্কের বাস্তবতা: অর্থনীতি বনাম রাজনীতি

ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি—এই শুল্ক ‘পাল্টা’ ব্যবস্থা (reciprocal tariff), যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবৈষম্য বানিজ্যচর্চা রোধ করা যায়। তবে বাস্তবে এই সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য একটি নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও শুল্কের মূল লক্ষ্য ছিল বৈদেশিক প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করা, বাস্তবে এটি প্রথম আঘাত হেনেছে বিশ্বায়ননির্ভর আমেরিকান ব্র্যান্ডগুলোর ওপর। অ্যাপলের মতো কোম্পানি, যাদের উৎপাদন চেইনের একটা বড় অংশ চীন, ভারত বা ভিয়েতনামের মতো দেশে গড়ে উঠেছে, তাদের পক্ষে হঠাৎ করে দেশীয় উৎপাদনে ফিরে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।

অ্যাপলের পদক্ষেপ: তাৎক্ষণিকতা বনাম দীর্ঘমেয়াদি চাপ

অ্যাপলের দ্রুত রেসপন্স একদিকে সরবরাহ শৃঙ্খলা রক্ষা করেছে, অন্যদিকে প্রশ্ন তুলেছে—এই কৌশল কতটা স্থায়ী সমাধান দিতে পারবে? কয়েকটি বিমানে পণ্য পাঠিয়ে হয়তো কিছু সময়ের জন্য মার্কেটের শুল্ক বোঝা কমানো যাবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই নীতি যদি বহাল থাকে, তাহলে অ্যাপলের পণ্যের দাম বাড়া অনিবার্য হয়ে উঠবে।

বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাপল এই মুহূর্তে এক ধরনের "ফায়ারফাইটিং" বা অগ্নিনির্বাপক কৌশল নিচ্ছে। বাস্তবতা হলো, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম এখনই না বাড়লেও ভবিষ্যতের মূল্যবৃদ্ধির ভিত্তি ইতোমধ্যেই গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে অ্যাপলের লজিস্টিক খরচ ও অপারেশনাল চাপও বাড়ছে।

গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন বনাম জাতীয়তাবাদী নীতি

এই ঘটনাটি একটি বৃহত্তর প্রশ্ন সামনে এনে দেয়: বর্তমান বিশ্বে যেখানে প্রতিটি প্রযুক্তি পণ্যের পেছনে বহু দেশের শ্রম, যন্ত্রাংশ ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটে, সেখানে ‘জাতীয় স্বার্থে’ নেয়া একক কোনো নীতি আসলে কতটা কার্যকর? ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির ফলে হয়তো চীন বা ভারতের আমদানি কিছুটা হ্রাস পাবে, কিন্তু একই সঙ্গে তা আমেরিকান ভোক্তা এবং কোম্পানিগুলোকেও চাপের মধ্যে ফেলবে।

বিশ্লেষকেরা এটিকে ‘শুল্ক জাতীয়তাবাদ’-এর একটি নিদর্শন বলছেন, যেখানে নীতির উদ্দেশ্য দেশীয় উৎপাদন রক্ষা হলেও বাস্তবতা হচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি এবং কোম্পানি পর্যায়ে অনিশ্চয়তা।

সাময়িক স্বস্তি, দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা

অ্যাপলের এই দ্রুত পদক্ষেপ মার্কিন বাজারে স্বল্পমেয়াদে স্থিতিশীলতা এনে দিতে পারে, কিন্তু এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। যদি ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্কনীতি দীর্ঘমেয়াদে বহাল থাকে, তাহলে অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলোকে হয় উৎপাদন কাঠামো পুনর্বিন্যাস করতে হবে, নয়তো মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি গ্রহণ করতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—বিশ্বায়িত অর্থনীতির বাস্তবতায় একতরফা শুল্কনীতি কতটা যুক্তিসঙ্গত? এবং তার আসল বোঝা শেষ পর্যন্ত কার কাঁধে পড়ে—ভোটকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমাণ ভোক্তার, নাকি বৈশ্বিক কোম্পানির?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ