- আগের আইনে কী ছিল
- নতুন নিয়ম কী
- পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিস্তৃত
- কেন এই পরিবর্তন
- অন্য দেশগুলো কী করছে
ইতালির সরকার দেশের নাগরিকত্ব আইন কঠোর করার ঘোষণা দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, অনেকেই শুধুমাত্র বিশ্বব্যাপী ভ্রমণের সুবিধার্থে পারিবারিক বংশধারা অনুসন্ধান করে ইতালীয় পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, অথচ তাদের প্রকৃতপক্ষে ইতালির সঙ্গে কোনো বাস্তব সংযোগ ছিল না।
নতুন নিয়মে কী পরিবর্তন আনা হলো?
এখন থেকে ইতালীয় বংশোদ্ভূত কমসংখ্যক ব্যক্তি নাগরিকত্ব পাবেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কেবলমাত্র যাদের মা-বাবা বা দাদা-দাদি ইতালিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, তারাই নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।
সরকার জানিয়েছে, অভিবাসীদের বংশধারা অনুসন্ধান করে বিপুল পরিমাণ নাগরিকত্ব আবেদন জমা পড়ায় এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
আগের নাগরিকত্ব আইন কী ছিল?
আগের নিয়ম অনুযায়ী, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারতেন যে তার কোনো ইতালীয় পূর্বপুরুষ ১৮৬১ সালের ১৭ মার্চের পর জীবিত ছিলেন (যেদিন ইতালির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়), তাহলে তিনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারতেন।
তবে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি জানিয়েছেন, এই নিয়ম পুরনো এবং আইন পরিবর্তনের উদ্দেশ্য হলো ‘অপব্যবহারকারী’দের দমন করা, যারা শুধুমাত্র ভ্রমণ সুবিধার জন্য ইতালির নাগরিকত্ব গ্রহণ করছিলেন।
নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর কী হবে?
শুক্রবার ঘোষিত নতুন ডিক্রি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে।
‘জুস স্যাঙ্গুইনিস’ (রক্তসূত্রের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব) পদ্ধতিতে যোগ্যতার শর্ত কঠোর করা হয়েছে।
এখন থেকে সব নাগরিকত্ব আবেদন অনলাইনে কেন্দ্রীয়ভাবে ইতালির ফেডারেল সরকার পরিচালনা করবে।
আবেদনকারীদের জন্য ইতালিতে গিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দ্বৈত নাগরিকত্বধারীরা যদি ইতালির প্রতি ‘নিষ্ঠার প্রমাণ’ না দেখান (যেমন কর প্রদান, ভোটদান বা পাসপোর্ট নবায়ন না করা), তাহলে তারা নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে থাকবেন।
এই পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিস্তৃত?
ইতালির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগের নিয়মে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬-৮ কোটি মানুষ ইতালির নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য ছিলেন, যা ইতালির মোট ৫.৯ কোটি জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকায় ইতালীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা ব্যাপকভাবে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করছিলেন।
২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ইতালির নাগরিকত্বধারী অভিবাসীদের সংখ্যা ৪০% বেড়েছে, যা ৪৬ লাখ থেকে ৬৪ লাখে পৌঁছেছে। শুধু ২০২৩ সালে আর্জেন্টিনায় ২০ হাজার জন নাগরিকত্ব পেলেও ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৩০ হাজার হয়েছে। একই সময়ে ব্রাজিলে ১৪ হাজার থেকে বেড়ে ২০ হাজার জন নাগরিকত্ব পেয়েছেন।
ইতালি কেন এই পরিবর্তন আনল?
বংশপরম্পরায় নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়মের সমালোচকরা বলছেন, এতে এমন ব্যক্তিরা নাগরিকত্ব পাচ্ছিলেন যাদের ইতালির সঙ্গে বাস্তবিক কোনো সংযোগ নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাজানি বলেন, ‘যাদের পূর্বপুরুষ শতাব্দী আগে ইতালি ছেড়েছেন এবং যাদের ইতালির সংস্কৃতি বা ভাষার সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই, তাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়া উচিত নয়।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কিছু প্রতিষ্ঠান বিপুল অর্থের বিনিময়ে মানুষের পূর্বপুরুষের ইতালীয় পরিচয় খুঁজে দিচ্ছিল, যাতে তারা নাগরিকত্ব পেতে পারেন। তাই এই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে।
অন্যান্য দেশগুলোর নীতি কী বলছে?
ইতালি ও ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ বংশপরম্পরায় নাগরিকত্ব প্রদান করে থাকে, তবে শর্ত ভিন্ন হতে পারে। যেমন,
হাঙ্গেরি: নাগরিকত্ব পেতে হলে ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণ করতে হয়।
পোল্যান্ড: পূর্বপুরুষের ধারাবাহিকতা প্রমাণ করতে হয়।
পর্তুগাল: সেফার্দি ইহুদিরা ঐতিহাসিক পূর্বপুরুষের সংযোগ প্রমাণ করলে নাগরিকত্ব পেতে পারেন।
ভবিষ্যতে আরও পরিবর্তন আসতে পারে?
আগামী ৮-৯ জুন ইতালির নাগরিকত্ব সহজ করার জন্য ভোট হবে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ইতালিতে বসবাসের আবশ্যক সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করা হতে পারে। এছাড়া, একবার নাগরিকত্ব পাওয়া গেলে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্তানদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
এই পরিবর্তন ইতালির নাগরিকত্ব ব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
0 মন্তব্যসমূহ