জাতিসংঘের এক ইতিবাচক ঘোষণার পর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। মঙ্গলবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ার প্রেসিডেন্ট ভবন প্লানাল্টো প্যালেসে এক বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রকাশ্যে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
ঘটনাটি ঘটে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কর্তৃক প্রকাশিত হাঙ্গার ম্যাপ–এ ব্রাজিলের নাম অনাহার ও চরম পুষ্টিহীনতার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর ঘোষণার পর। এফএও-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিভিয়ার আন্ডারনারিশমেন্ট বা চরম অপুষ্টির দেশগুলোর তালিকা থেকে ব্রাজিল আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে এসেছে।
শৈশব ও যৌবনের ক্ষুধার স্মৃতি
বক্তব্যে আবেগাপ্লুত লুলা নিজের দারিদ্র্যপীড়িত শৈশব ও যৌবনের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “আমিও অন্য ব্রাজিলীয়দের মতো বহুদিন ক্ষুধার্ত থেকেছি। ক্ষুধা লাগলেও কারও কাছে বলতে পারতাম না, লজ্জা পেতাম। তখন চুপচাপ আবার কাজে লেগে যেতাম।”
১৯৪৫ সালে উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়া লুলা কিশোর বয়সেই অর্থের অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ সময়ের শ্রমজীবী জীবনে তিনি ক্ষুধা ও অভাবের কষ্ট কাছ থেকে অনুভব করেছেন।
ব্রাজিলের অগ্রগতির স্বীকৃতি
লুলা বলেন, ব্রাজিলের হাঙ্গার ম্যাপ থেকে বাদ পড়া কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষুধা দমনে যৌথ প্রচেষ্টার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের “ফোমে জিরো” (শূন্য ক্ষুধা) এবং “বোলসা ফ্যামিলিয়া” কর্মসূচি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত এক দশকে ব্রাজিলে অপুষ্টির হার নাটকীয়ভাবে কমেছে। সরকারি সামাজিক সহায়তা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি এই সাফল্যের প্রধান কারণ।
আবেগঘন মুহূর্ত
বক্তব্য শেষে সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা দেখতে পান, লুলার চোখে পানি। তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “যে দেশে আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, আজ সে দেশ ক্ষুধার তালিকা থেকে মুক্ত। এটা আমার জীবনের অন্যতম বড় সুখের খবর।”
বিশ্লেষকদের মতে, ব্রাজিলের এই অর্জন শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি সামাজিক উন্নয়ন, মানবিক নীতি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ব্রাজিলের প্রতিশ্রুতির প্রতীক হয়ে থাকবে।
0 মন্তব্যসমূহ