ঢাকা, ১ জুন ২০২৫:
বাংলাদেশ এবং ব্রাজিলের নাগরিকদের জন্য এসেছে আনন্দের খবর। এখন থেকে দুই দেশের মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ চালু হয়েছে। ফলে বাংলাদেশি নাগরিকরা ব্রাজিলের নাগরিকত্ব গ্রহণের পরও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বজায় রাখতে পারবেন এবং একইভাবে ব্রাজিলিয়ান নাগরিকরাও বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিতে পারবেন, নিজের দেশের নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা ছাড়াই।
বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৪৪টি নতুন দেশের সঙ্গে দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দেয়। এই তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিলের নাম যুক্ত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ১০১টি দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের পরও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিশেষ শাখা (Special Branch) থেকে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ’ সংগ্রহের মাধ্যমে এ সুযোগ গ্রহণ করা যাবে। একইভাবে ব্রাজিল সরকার ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দ্বৈত নাগরিকত্বের ওপর পূর্বের সকল বিধিনিষেধ তুলে নেয়, ফলে ব্রাজিলিয়ান নাগরিকরাও অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণের পর ব্রাজিলের নাগরিকত্ব বজায় রাখতে পারবেন।
প্রবাসীদের জন্য সুবিধা:
এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশে বসবাসকারী ও কর্মরত নাগরিকরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, শিক্ষা, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের সুবিধা আরও নির্বিঘ্নে ভোগ করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রবাসী কল্যাণ সম্পর্ক আরও মজবুত করবে।
যা করতে হবে:
যারা এই সুবিধা নিতে ইচ্ছুক, তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের কনস্যুলেট বা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ’ সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক।
বিশদ তথ্য:
বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ শাখার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট:
specialbranch.gov.bd
আইনগত কাঠামো:
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন মূলত ১৯৫১ সালের "The Citizenship Act" এবং ১৯৭২ সালের "Bangladesh Citizenship (Temporary Provisions) Order" দ্বারা পরিচালিত হয়।
আইনগত কাঠামো:
বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইন মূলত ১৯৫১ সালের "The Citizenship Act" এবং ১৯৭২ সালের "Bangladesh Citizenship (Temporary Provisions) Order" দ্বারা পরিচালিত হয়।
দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি:
বাংলাদেশ সরকার নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকদের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দেয়। এই সুবিধা মূলত বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য, যারা নির্দিষ্ট ১০১টি দেশের নাগরিকত্ব ধারণ করেন। এই তালিকায় ব্রাজিলও অন্তর্ভুক্ত।
আবেদন প্রক্রিয়া:
দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে "Dual Nationality Certificate (DNC)" এর জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনটি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্ধারিত ফরমে জমা দিতে হয়। আবেদনপত্রটি বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। আবেদনকারীকে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ আবেদন জমা দিতে হয়।
সুবিধাসমূহ:
বাংলাদেশে সম্পত্তি অধিকার বজায় রাখা
ভোটাধিকার (যদি প্রযোজ্য হয়)
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণ
বাংলাদেশে অবাধে যাতায়াতের সুযোগ
আইনগত কাঠামো:
ব্রাজিলের নাগরিকত্ব আইন ১৯৮৮ সালের সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হয়, যা পরবর্তীতে সংশোধিত হয়েছে।
দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি:
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ব্রাজিল সরকার দ্বৈত নাগরিকত্বের উপর সমস্ত সীমাবদ্ধতা তুলে নিয়েছে। এখন ব্রাজিলিয়ান নাগরিকরা অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও তাদের ব্রাজিলিয়ান নাগরিকত্ব হারায় না, যতক্ষণ না তারা স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করে।
নাগরিকত্ব প্রাপ্তির উপায়:
জন্মসূত্রে (Jus Soli): ব্রাজিলে জন্মগ্রহণ করলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
বংশসূত্রে (Jus Sanguinis): ব্রাজিলিয়ান পিতামাতার সন্তান হলে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
স্বাভাবিকীকরণ (Naturalization): ব্রাজিলে নির্দিষ্ট সময় বসবাসের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।
বিবাহের মাধ্যমে: ব্রাজিলিয়ান নাগরিকের সঙ্গে বিবাহের পর নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
আবেদন প্রক্রিয়া:
নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়ায় সাধারণত পুলিশ যাচাই-বাছাই, ভাষা দক্ষতা পরীক্ষা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক শর্ত পূরণ করতে হয়।
সুবিধাসমূহ:
ব্রাজিলে ভোটাধিকার
সরকারি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার সুবিধা
বিনিয়োগ ও ব্যবসার সুযোগ
পরিবারের সদস্যদের জন্য পুনর্মিলনের সুযোগ
বাংলাদেশ ও ব্রাজিল উভয় দেশেই দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ রয়েছে, তবে প্রতিটি দেশের নিজস্ব আইন ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। যদি আপনি বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে ব্রাজিলের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে চান, বা ব্রাজিলিয়ান নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে চান, তবে আপনাকে উভয় দেশের নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে, সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ