Header Ads Widget

Responsive Advertisement

উত্তপ্ত পরিবেশে কংগ্রেস পুনরায় চালু: গৃহবন্দিত্বের সিদ্ধান্ত ঘিরে বিরোধী দলের বিক্ষোভে অধিবেশন স্থগিত

Foto: José Cruz/Agência Brasil


ব্রাজিল বাংলা টিভি ডেস্ক:নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রাসিলিয়া, ১৭ জুলাই ২০২৫

দীর্ঘ অবকাশ শেষে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ব্রাজিলের জাতীয় কংগ্রেস পুনরায় খুললেও শুরুতেই যুদ্ধকালীন পরিবেশ সৃষ্টি হয় রাজধানী ব্রাসিলিয়ায়। মন্ত্রিসভা প্রাঙ্গণ এবং থ্রি পাওয়ার স্কয়ারে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক সামরিক পুলিশ এবং সশস্ত্র সদস্য মোতায়েন ছিল। এই উত্তেজনার পেছনে অন্যতম কারণ—সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে গৃহবন্দি রাখার আদালতের নির্দেশ, যা সোমবার কার্যকর হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভবন থেকে শুরু করে এসপ্ল্যানাডা দে মিনিস্টেরিও পর্যন্ত এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী টানা হয়। সামরিক পুলিশের গাড়ি এবং সাঁজোয়া যান সকাল থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে অবস্থান নেয়। অনেক বিশ্লেষকের মতে, ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারির সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতেই এ প্রস্তুতি।

দূর থেকে কংগ্রেস পরিচালনায় নজর মোত্তার

চেম্বার অফ ডেপুটিজের স্পিকার হুগো মোত্তা (রিপাবলিকান-প্যারাইবা) সেদিন প্যারাইবাতে অবস্থান করলেও ঘটনাবলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যেতে পারে, তবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সেগুলো কার্যকর করা অবশ্য কর্তব্য।”

বিরোধী দলের কক্ষ দখল ও অধিবেশন স্থগিত

সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর দল পিএল-এর নেতৃত্বে বিরোধীরা চেম্বার এবং সিনেটের অধিবেশন চলাকালে প্লেনারি কক্ষ দখল করে নেয় এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। ফলে চেম্বার স্পিকার মোত্তা এবং সিনেট প্রেসিডেন্ট ডেভি আলকোলম্ব্রে (ইউনিয়াও-এপি) উভয়েই ওই দিনের অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করেন।

আলোকলম্ব্রে এই পদক্ষেপকে “স্বেচ্ছাচারী আচরণ” বলে আখ্যায়িত করেন। অপরদিকে, মোত্তা নির্দেশ দেন যে কেবলমাত্র সংসদ সদস্যরাই চেম্বার প্লেনারিতে প্রবেশ করতে পারবেন। এমনকি নির্দিষ্ট ব্যাজধারী কর্মকর্তাদেরও প্রবেশ সীমিত করা হয় যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়।

‘সাধারণ ক্ষমা’ বিল ঘিরে উত্তেজনা

চেম্বার পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সহ-সভাপতি আলটিনিউ কোর্তেস (পিএল–আরজে) স্পষ্টভাবে বলেন, “যেদিন হুগো মোত্তা অনুপস্থিত থাকবেন, আমি ‘সাধারণ ক্ষমা’ বিলের ওপর ভোট আহ্বান করব।” এই বিলের লক্ষ্য হলো ৮ জানুয়ারি ২০২৩-এর ঘটনায় অভিযুক্তদের জন্য সাধারণ ক্ষমা নিশ্চিত করা।

এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিরোধী পক্ষ কেবল সরকার নয়, বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্রের শৃঙ্খলাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে অভিমত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

মোত্তার আহ্বান: সংসদ হবে সংলাপের সেতু

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগেই চেম্বার স্পিকার মোত্তা X (সাবেক টুইটার)-এ লিখেন, “সংসদকে হতে হবে বোঝাপড়ার সেতু।” তিনি জানান, তিনি ভোর থেকে ব্রাসিলিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পরবর্তী দিনের আলোচনার জন্য নেতা সম্মেলন ডাকবেন।

ভিতরের দ্বন্দ্বে বিপাকে পিএল সভাপতি

সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর ঘনিষ্ঠদের চাপের মুখে পড়েছেন পিএল সভাপতি ওয়ালদেমার কোস্তা নেতো (পিএল–এসপি)। দল থেকে একজন এমপিকে বহিষ্কারের দাবিতে তাঁকে চাপে ফেলা হয়েছে। এই এমপি, আন্তোনিও কার্লোস রদ্রিগেজ, সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা এবং বিচারপতি আলেকজান্দ্রে ডি মোরেসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেন।

রদ্রিগেজ বহুদিনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং মোরেসের ব্যক্তিগত বন্ধু হওয়ায় ওয়ালদেমার স্পষ্ট অবস্থান নিতে দ্বিধায় পড়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনেনি সুপ্রিম কোর্ট।

অর্থনীতিতে উজ্জ্বল দিক: ইতাউ ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি

রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও, ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংক ইতাউ ইউনিবাঙ্কো দ্বিতীয় প্রান্তিকে R$১১.৫০৮ বিলিয়ন নিট মুনাফা অর্জন করেছে। এটি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ৩.৪% এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.১% বেশি।

এমনকি প্রায় R$৯.৯৬৬ বিলিয়ন খারাপ ঋণের জন্য সংরক্ষণ করেও, ইতাউয়ের মুনাফা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যাডেস্কো (R$৬.০৬৭ বিলিয়ন)স্যান্টান্ডার (R$৩.৭৩ বিলিয়ন)–কে ছাড়িয়ে গেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ