Header Ads Widget

Responsive Advertisement

তেল খাতে বড় পরিবর্তনের মুখে ব্রাজিল: আমদানিকারকে পরিণত হওয়ার শঙ্কা




ব্রাজিল বাংলা টিভি ডেস্ক: প্রকাশনা: ব্রাজিল বাংলা টিভি | ২০ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব তেল উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষস্থানে থাকলেও ব্রাজিলের জন্য অপেক্ষা করছে এক কঠিন বাস্তবতা।
২০৩০ সাল থেকে দেশটি রপ্তানিকারক থেকে আমদানিকারকে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। খনি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ব্রাজিলের তেল উৎপাদন ২০৩০ সালে স্থবির হয়ে পড়বে, ২০৪০ সালে অর্ধেকে নেমে আসবে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে কার্যত বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই পূর্বাভাস এসেছে EPE (এনার্জি রিসার্চ কোম্পানি)-এর বিশ্লেষণ থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রযুক্তি ও বাজারমুখী মডেল গ্রহণ করতে না পারায় ব্রাজিল পিছিয়ে পড়েছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র কম খরচে অনশোর (onshore) শেল গ্যাস উত্তোলনে সফল, অন্যদিকে ব্রাজিল ব্যয়বহুল অফশোর (offshore) অনুসন্ধানে নির্ভরশীল।

প্রাক-লবণ স্তরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থতা
২০০৬ সালে ব্রাজিলের উপকূলে গভীর জলে প্রাক-লবণ স্তর আবিষ্কৃত হলেও, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিলাম বন্ধ থাকার কারণে সেই সম্ভাবনার পূর্ণ ব্যবহার হয়নি। CBIE-এর পরিচালক আদ্রিয়ানো পাইরেস বলেন, “২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত পাঁচ বছর তেল নিলাম বন্ধ ছিল—এটি ছিল বড় ভুল।”

শেল বিপ্লব আর ব্রাজিলের জড়তা
যুক্তরাষ্ট্র গত দুই দশকে শেল বিপ্লবের মাধ্যমে দৈনিক তেল উৎপাদন প্রায় তিনগুণ করেছে। ২০০৫ সালে তাদের দৈনিক উৎপাদন ছিল ৪.৯৯ মিলিয়ন ব্যারেল, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ১৩.৫ মিলিয়নে। তুলনায় ব্রাজিল মে মাসে রেকর্ড ৩.৬৯৭ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন করলেও সেই গতিতে টিকতে পারছে না।

ভবিষ্যত রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপের তাগিদ
IBP (ব্রাজিলিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অয়েল অ্যান্ড গ্যাস)-এর সভাপতি রবার্তো আর্দেঙ্গি বলেন, “আমাদের বর্তমান উৎপাদন দ্বিগুণ হতে পারত, যদি আমরা পাঁচ বছর নিলাম ছাড়া না কাটাতাম।” তিনি বলেন, এখনই অনুকূল নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না করলে ২০৩০ সালের পর থেকে আমদানির উপর নির্ভরশীল হতে হবে।

শেলের সম্ভাবনা, কিন্তু বাধা আইনি জটিলতায়
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত ফ্র্যাকিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পাললিক শিলা থেকে শেল তেল উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ব্রাজিলের পারানায় ২০১৯ সালে এই প্রযুক্তি নিষিদ্ধ হয়েছে, যা দেশব্যাপী প্রভাব ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফেডারেল সরকার চাইলে এই বাধা দূর করতে পারে।

আর্জেন্টিনার অগ্রগতি ব্রাজিলের জন্য চ্যালেঞ্জ
আর্জেন্টিনা বর্তমানে শেল উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটি ইতিমধ্যে তাদের উৎপাদনের প্রায় ৫০% রপ্তানি করছে। মার্কো টাভারেস জানান, “আর্জেন্টিনা মার্কিন প্রযুক্তি গ্রহণ করে তেল খাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।”

জ্বালানি নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতিতে ব্রাজিলের সুবিধা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ আমেরিকা একটি স্থিতিশীল অঞ্চল হওয়ায়, ব্রাজিলের হাতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক সুযোগ। এশিয়ায় চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি ইউরোপও বিকল্প সরবরাহকারীর সন্ধানে রয়েছে।


বিশ্ব বাজারে ব্রাজিলের তেলের চাহিদা রয়েছে, তবে তা পূরণে জরুরি হচ্ছে প্রযুক্তি গ্রহণ, নিলাম কার্যক্রম পুনরায় জোরদার এবং বিনিয়োগ-বান্ধব নীতিমালা গ্রহণ। না হলে, সম্ভাবনাময় একটি দেশ খুব শিগগিরই আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ