কিন্তু কেন ব্রাজিল? কতটুকু নিরাপদ ও সুবিধাজনক সেখানে বসবাস, বিনিয়োগ এবং নাগরিকত্ব পাওয়া? এই প্রতিবেদন সেই বিষয়েই বিস্তারিত তুলে ধরছে।
কেন সেকেন্ড হোমের ভাবনা?
বাংলাদেশীদের সেকেন্ড হোমের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:
(1) সন্তানদের উচ্চশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা
(2) ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সম্প্রসারণ
(3) চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন
(4) অবসরকালীন নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবেশ
(5) দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা (যেখানে সম্ভব)
(6) রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে বিকল্প গন্তব্য
ব্রাজিল কেন বিবেচনায় আসছে?
ব্রাজিল মূলত লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। দেশটি তার সহজ ভিসা নীতিমালা, খোলামেলা সমাজব্যবস্থা এবং তুলনামূলক সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার জন্য অনেক দেশের নাগরিকদের আকর্ষণ করছে।
ব্রাজিলের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য:
(১) বিনিয়োগ-ভিসা (Investor Visa) সহজলভ্য
(২) স্থায়ী বসবাসের অনুমতি (Permanent Residency) সহজে পাওয়া যায়
(৩) দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা
(৪) সম্পদ বা সম্পত্তি কিনতে কোনো কঠিন নিয়ম নেই
(৫) সাংস্কৃতিকভাবে বহুমুখী ও খোলামেলা পরিবেশ
(৬) ইংরেজি ছাড়াও পর্তুগিজ ভাষায় দ্রুত শিখে নেওয়ার সুযোগ
(৭) উন্নত মেডিকেল সুবিধা ও পর্যটন কেন্দ্র
বিনিয়োগ ভিত্তিক নাগরিকত্ব / রেসিডেন্সি সুবিধা
ব্রাজিল সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রোগ্রাম চালু রেখেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়:
ধরণ | বিনিয়োগের পরিমাণ | সুবিধা |
---|---|---|
ব্যবসা বিনিয়োগ | প্রায় ৫০০০০ মার্কিন ডলার | স্থায়ী রেসিডেন্সি |
রিয়েল এস্টেট | নির্দিষ্ট মূল্যের সম্পদ কেনা | রেসিডেন্সি / নাগরিকত্ব |
দক্ষ পেশাজীবী | বিশেষ যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা | ওয়ার্ক ভিসা / PR |
বিনিয়োগের ৪-৫ বছরের মধ্যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়, এবং ব্রাজিল দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে।
জীবনযাত্রা ও নিরাপত্তা
ব্রাজিলে জীবনযাত্রার ব্যয় বাংলাদেশ বা ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় কিছুটা বেশি, তবে মালয়েশিয়া বা দুবাইয়ের তুলনায় কম।
নিরাপত্তা:
ব্রাজিলের কিছু শহরে অপরাধের হার বেশি। তবে নির্দিষ্ট এলাকায় (যেমন সাও পাওলো, রিও ডি জেনেইরোর নির্ধারিত আবাসিক অঞ্চল) নিরাপদভাবে বসবাস করা যায়। গেইটেড কমিউনিটি বা কন্ডো সিস্টেম বেশি জনপ্রিয়।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
ব্রাজিলের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের। প্রাইভেট স্বাস্থ্যসেবা উন্নত, এবং বিমা সুবিধা থাকলে চিকিৎসা সাশ্রয়ী।
ভিসা পাওয়ার সহজতা
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য পর্যটন ভিসা নিতে কিছুটা সময় লাগে, তবে বিনিয়োগ/বিজনেস ভিসা তুলনামূলক সহজ। একবার রেসিডেন্সি অনুমোদিত হলে পরিবারের সদস্যরাও সেটির আওতায় আসতে পারেন।
চ্যালেঞ্জ
ব্রাজিলে বসবাসের ক্ষেত্রে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ:
(১) পর্তুগিজ ভাষা জানা জরুরি
(২) কিছু শহরে অপরাধ প্রবণতা
(৩) সাংস্কৃতিক ভিন্নতা ও মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার
(৪) দূরত্ব (বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘ ফ্লাইট)
যারা ভবিষ্যতে একটি বিকল্প গন্তব্য খুঁজছেন এবং বিনিয়োগ বা ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য ব্রাজিল হতে পারে সম্ভাবনাময় একটি ‘সেকেন্ড হোম’। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে রিসার্চ, স্থানীয় আইন ও অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
বিশেষ করে যাদের ব্যবসা, রিয়েল এস্টেট, বা স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ পরিকল্পনা আছে, তাদের জন্য ব্রাজিলের দিকটা একবার ভাবা যেতেই পারে।
পরামর্শ:
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে স্থানীয় আইনজীবী বা অভিবাসন পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ