ইউরোপের দুই দেশ—উত্তর ম্যাসেডোনিয়া ও সার্বিয়া—ভুয়া ওয়ার্ক পারমিটের অভিযোগে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সাময়িকভাবে ভিসা ইস্যু বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশি প্রবাসী সম্প্রদায় ও বৈধ কর্মসংস্থান খাতের প্রতিনিধিরা।
স্থানীয় গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক কয়েক মাসে এই দুই দেশের দূতাবাসে জমা দেওয়া বিপুলসংখ্যক ওয়ার্ক পারমিট নথি যাচাইয়ের পর প্রায় ৯০ শতাংশই জাল বা প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে নতুন কোনো ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ইস্যু আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
দূতাবাসের অবস্থান
উত্তর ম্যাসেডোনিয়ার দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আসা অসংখ্য ওয়ার্ক পারমিটের সত্যতা যাচাইয়ে সমস্যার কারণে তারা সাময়িকভাবে নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ রেখেছে। একই পদক্ষেপ নিয়েছে সার্বিয়াও। উভয় দেশই বলছে, শ্রমবাজারে অনিয়ম ঠেকাতে নতুন করে কঠোর যাচাই প্রক্রিয়া চালু করা হবে।
এক দূতাবাস কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, “যতদিন না পর্যন্ত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ ও নিরাপদ হচ্ছে, ততদিন বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ওয়ার্ক পারমিট ভিসা অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়।”
ভুয়া নথির পেছনে দালাল চক্র
স্থানীয় শ্রম বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের কিছু অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালাল চক্র ভুয়া স্পন্সরশিপ পেপার ও নকল ওয়ার্ক পারমিটের মাধ্যমে ইউরোপগামী চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রতারণা করে আসছে। তারা প্রতিটি নকল পারমিটের বিপরীতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এর ফলে শুধু প্রতারিত শ্রমিকই নয়, বরং বাংলাদেশের শ্রমবাজারের আন্তর্জাতিক সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান
বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি। কেউ ভুয়া বা জাল নথি ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, বৈধ উপায়ে বিদেশে কাজের আবেদন জমা দিতে সরকার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি ও সরকারি অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করতে হবে।
প্রবাসীদের সতর্কবার্তা
ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা নতুন আবেদনকারীদের সতর্ক করে বলেছেন—দালাল বা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে নয়, বরং সরাসরি সরকারি ওয়েবসাইট বা দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করলেই নিরাপদ থাকা যায়।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত সাময়িক হলেও, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সতর্কবার্তা। শ্রম রপ্তানির ক্ষেত্রে যদি স্বচ্ছতা ও যাচাই প্রক্রিয়া কঠোরভাবে কার্যকর না হয়, তবে ভবিষ্যতে আরও ইউরোপীয় দেশ একই পথে হাঁটতে পারে।
সূত্র: গালফ নিউজ, ভিসাভার্জ, দ্য ফাইন্যান্স টুডে, এপি নিউজ
সংবাদদাতা: নিজস্ব প্রতিনিধি

 
 
 
 
.png) 
.png) 
 
0 মন্তব্যসমূহ