২০২৫ সালে ব্রাজিল G20-এর সভাপতি দেশ হিসেবে বৈশ্বিক নেতৃত্ব প্রদানে উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ব্রিটিশ সাময়িকী The Economist সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে উল্লেখ করেছে, প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য ব্রাজিলের এই নেতৃত্বের উজ্জ্বলতা ম্লান করে দিচ্ছে।
বিশ্লেষণে বলা হয়, একদিকে লুলা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন, অপরদিকে তার কথাবার্তা ও অবস্থান আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। বিশেষ করে কিছু স্পর্শকাতর ইস্যুতে তাঁর মন্তব্য বিশ্ব নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
🔺 বিতর্কিত বক্তব্যগুলো যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে:
-
ইসরায়েল-গাজা সংঘাত প্রসঙ্গে: লুলা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে হিটলারের ইহুদি নিধনের সঙ্গে তুলনা করেন। এ মন্তব্যে ইসরায়েল তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং আন্তর্জাতিক মহলেও ব্যাপক সমালোচনা হয়।
-
নাভালনির মৃত্যুতে প্রতিক্রিয়া: রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির মৃত্যুর পর লুলা বলেন, “তাড়াহুড়ো করে কাউকে দোষারোপ করা উচিত নয়।” পশ্চিমা দেশগুলো এই মন্তব্যকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ঐক্যকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছে।
-
চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা: লুলা প্রকাশ্যে চীনের প্রতি সমর্থন জানান এবং রাশিয়াকে ‘শান্তিপূর্ণ আলোচনার অংশ’ হিসেবে তুলে ধরেন। এর ফলে ব্রাজিলের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠেছে।
🔹 G20–এ ব্রাজিলের তিনটি অগ্রাধিকার:
প্রেসিডেন্ট লুলা G20 সভাপতিত্বকালে তিনটি মূল লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন:
-
সামাজিক ন্যায়বিচার ও দারিদ্র্য বিমোচন
-
জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই উন্নয়ন
-
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত সংস্কার
তবে The Economist বলছে, এসব উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য বাস্তবায়নে লুলার দ্ব্যর্থক পররাষ্ট্রনীতি ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
🔸 সমালোচকদের মত:
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রাজিল একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মুহূর্তে রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বিতর্কিত ভাষ্য দেশের পররাষ্ট্রনীতির সুসংহত রূপরেখাকে দুর্বল করে তুলছে। “ব্রাজিল এখনো ঠিক করেনি—তারা কী ধরনের দেশ হতে চায়,” বলেছে The Economist।
জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব অর্থনীতি ও গ্লোবাল গভর্নেন্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে ব্রাজিল। তবে প্রেসিডেন্ট লুলার বক্তব্য ও অবস্থান স্পষ্ট না হলে, এই সুযোগ রাজনৈতিকভাবে ক্ষীণ হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
তথ্যসূত্র: The Economist, Veja, Agência Brasil, Estadão
0 মন্তব্যসমূহ