ব্রাজিল বাংলা টিভি প্রতিবেদন | ব্রাসিলিয়া থেকে
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এক কড়া বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণ’ করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি মার্কিন দূতাবাসের বিরুদ্ধে ট্রান্সজেন্ডার ফেডারেল ডেপুটি এরিকা হিলটনের লিঙ্গপরিচয় অস্বীকার করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে ব্রাজিলের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন।
"এরিকা, তোমার সঙ্গে যা হয়েছে তা আমার দৃষ্টিতে একেবারেই জঘন্য," — বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) নারীদের অধিকার ও সহিংসতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন অনুমোদনের এক অনুষ্ঠানে এরিকাকে উদ্দেশ্য করে বলেন প্রেসিডেন্ট লুলা। তিনি আরও বলেন, "তুমি তো কোনো অপারেশন চাওনি, তুমি শুধু একটি পাসপোর্ট ও ভিসা চেয়েছিলে। সেটাই তাদের দেওয়া উচিত ছিল। এটি শুধু তোমার অধিকারের প্রশ্ন নয়, এটি ব্রাজিলের সম্মান ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।"
ঘটনাপ্রবাহ
ডেপুটি এরিকা হিলটন, যিনি ব্রাজিল কংগ্রেসের প্রথম উন্মুক্তভাবে ট্রান্সজেন্ডার সদস্য, আগামী ১২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও এমআইটি-তে আয়োজিত "Brazil Conference" এ অংশ নেওয়ার জন্য একটি কূটনৈতিক ভিসার আবেদন করেছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাসিলিয়াস্থ দূতাবাস তার ব্রাজিলীয় পাসপোর্ট ও সংশোধিত জন্মসনদে ‘নারী’ পরিচয় থাকা সত্ত্বেও তাকে ‘পুরুষ’ হিসেবে নথিভুক্ত করে।
এরিকা অভিযোগ করেন, এ ঘটনা কেবল একটি প্রশাসনিক বিভ্রান্তি নয়, বরং এটি মার্কিন সরকারের একটি ‘ট্রান্সফোবিক’ নীতির অংশ, যা সরাসরি তার ব্যক্তিগত পরিচয় এবং কূটনৈতিক মর্যাদাকে অসম্মান করে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
ব্রাজিলে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস একটি বিবৃতিতে জানায়, “ভিসা সংক্রান্ত নথিপত্র গোপনীয় এবং যুক্তরাষ্ট্র কেবল পুরুষ ও নারীর মধ্যেই জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেয়। এই নীতির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।”
এটি উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ (Executive Order 14168) জারি করেন, যেখানে বলা হয়, “লিঙ্গ একটি অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য এবং তা কেবল পুরুষ ও নারী পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।” এর ফলে আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতে লিঙ্গ পরিবর্তনের সুযোগ ফেডারেল কাগজপত্রে নিষিদ্ধ করা হয়।
লুলার প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট লুলা তার বক্তব্যে জাতীয় কংগ্রেসকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন,
"আমরা যদি একজন মার্কিন নারী সাংসদকে ব্রাজিলে আসতে দিই, আমরা তার পরিচয়ে হস্তক্ষেপ করি না। শুধু অনুমোদন বা অস্বীকৃতি দিতে পারি। কিন্তু কাউকে তার পরিচয় বদলাতে বাধ্য করা — এটা কোনো সভ্য দেশে গ্রহণযোগ্য নয়।"
লুলা আরও বলেন, “কে এই নারী, তা নির্ধারণ করার অধিকার ব্রাজিল ও ওই ব্যক্তির নিজস্ব। এটি কোনো প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না।”
এরিকার বক্তব্য
এই ঘটনার পর এরিকা হিলটন তার সফর বাতিল করেন এবং রাষ্ট্রপতি লুলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন,
“প্রেসিডেন্টের এই অবস্থান আমাদের জন্য আশার আলো। এটি প্রমাণ করে যে আমরা ট্রান্স নারীরা ব্রাজিলে একা নই। রাষ্ট্র আমাদের পক্ষে কথা বলছে।”
তিনি আরও বলেন,
“নারীদের অধিকারের সুরক্ষা মানেই সব নারীর সুরক্ষা — শ্রমজীবী নারী, গ্রামীণ নারী, আদিবাসী নারী, ট্রান্স নারী এবং ট্র্যাভেস্টি নারীদেরও।”
কূটনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (ইতামারাতি) লুলার অনুরোধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, এই ধরনের ঘটনায় ভবিষ্যতে আর কেউ ব্রাজিলের একজন নাগরিকের পরিচয়ে হস্তক্ষেপ করতে সাহস করবে না।
প্রতিবেদন: ব্রাজিল প্রতিনিধি, ব্রাসিলিয়া | ব্রাজিল বাংলা টিভি
সম্পাদনায়: আন্তর্জাতিক ডেস্ক
0 মন্তব্যসমূহ