Header Ads Widget

Responsive Advertisement

"বাংলাদেশি ও নেপালি অভিবাসীদের জন্য অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলে পুলিশি অভিযান"



ব্রাজিল বাংলা টিভি ডেস্ক: ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ (পিএফ) সম্প্রতি একটি অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, যারা বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকে আসা অভিবাসীদের অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রলোভন দেখাতো। এই অভিযানের ফলে জানা গেছে, এসব অভিবাসী প্রায় ৫০,০০০ রিয়াল (প্রায় ১০,০০০ মার্কিন ডলার) দিয়ে সহায়তা নিতো, যার মধ্যে ভয়ানক ও গোপন পথ দিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করা হতো।

অভিযানটি ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে পরিচালিত হয়। অপরাধী চক্রটি অভিবাসীদের প্রথমে ব্রাজিলের সাও পাওলোর গুয়ারুলহোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করাতো। পরে তাদের উত্তর ব্রাজিলে নিয়ে যাওয়া হতো, যেখানে অ্যাসিস ব্রাসিল (অ্যাক্রি) এবং গুজারা-মিরিম (রন্ডোনিয়া) শহরগুলো সীমান্তবর্তী দেশ যেমন পেরু ও বলিভিয়া পার হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো। এরপর অভিবাসীরা মেক্সিকোর সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করতো।

এই অভিযানে ১০৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন শহরে ৩৫টি তল্লাশি ও ৭টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যার মধ্যে ছিল পোর্তো ভেলহো, গুজারা-মিরিম, সাও পাওলো, বোয়া ভিস্তা প্রভৃতি এলাকা। তদন্তে জানা যায়, এই অপরাধী চক্রটিতে ট্রাভেল এজেন্ট, ট্যাক্সিচালক, হোটেল ব্যবসায়ী এবং “কইওট” নামে পরিচিত সীমান্ত পারাপার সহায়তাকারী ব্যক্তিরা জড়িত ছিল। তারা ভুয়া নথিপত্র তৈরি এবং অভিবাসীদের পরিবহনের ব্যবস্থা করত।

এছাড়া ২০২৩ সাল থেকে বলিভিয়া সীমান্তে একাধিক কইওট আটক হওয়ার পর ২০২৪ সালে আরও ছয়জনকে হাতেনাতে আটক করা হয় এবং ২২ জন নেপালি ও ভারতীয় অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়, যারা অমানবিক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল।


ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ (পিএফ) সম্প্রতি অভিবাসী পাচার চক্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান শুরু করে, যা দুটি আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ঘটনার পরেই পরিচালিত হয়। এই ঘটনাগুলো অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের প্রচেষ্টার ঝুঁকি এবং পাচারকারীদের নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করে।

ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ (পিএফ) সাধারণত গ্রেফতারকৃতদের নাম প্রকাশ করে না, বিশেষ করে যখন তদন্ত চলমান থাকে। তদন্তের স্বার্থে এবং আইনগত কারণে, তাদের নামগুলো সাধারণত গোপন রাখা হয়। তবে আদালতের আদেশ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে নাম প্রকাশ করা হলে, তা নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যম বা আদালতের নথিতে পাওয়া যেতে পারে।

লেনিলদার ঘটনা:
লেনিলদা, আগস্ট ২০২১ সালে ব্রাজিলের ভালে দো প্যারাইসো (রন্ডোনিয়া) থেকে যাত্রা শুরু করেন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পার হওয়ার উদ্দেশ্যে। তিনি এবং তার দল প্রায় এক মাস এক বাসায় অবস্থান করেন, "উপযুক্ত সময়ের" জন্য অপেক্ষা করে। 

৬ই সেপ্টেম্বর তারা মরুভূমি পারাপার শুরু করে, কিন্তু লেনিলদা শীঘ্রই ক্লান্তি, তৃষ্ণা, তাপ এবং ক্ষুধার কারণে অক্ষম হয়ে পড়েন। তার পরিবার জানায়, তিনি অসুস্থ হয়ে মূর্ছা যান, এবং তার সাথে থাকা শৈশবের বন্ধুরা এবং পথপ্রদর্শক কইওট তাকে মরুভূমিতে ফেলে চলে যায়, তাকে উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যা কখনোই পূরণ হয়নি।

যুবতীর নির্যাতনের ঘটনা:
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে, ২৪ বছর বয়সী এক তরুণীর পরিবার অভিযোগ করে যে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে কইওটরা তাকে অপহরণ, লুটপাট এবং নির্যাতন করে। তিনি কোমায় চলে যান এবং মেক্সিকোর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পুলিশ জানায় যে, কইওটরা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং গুরুতর অবস্থায় এক খামারের পাশে বেঁধে ফেলে রেখে যায়। তার পরিবার সামাজিক মাধ্যমে সহায়তার আবেদন জানায় এবং তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে।

এই ঘটনাগুলোতে দেখা যায় কইওটরা কেবল অর্থের বিনিময়ে অভিবাসীদের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু তাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা দেয় না। এই নিষ্ঠুরতা উন্মোচিত হওয়ার পর, পিএফ এই পাচার চক্রের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান জোরদার করে, যা লক্ষ লক্ষ রিয়ালের অবৈধ আয়ের উৎস হিসেবে চিহ্নিত হয়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ